শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। জাতির সঠিক উন্নয়ন শিক্ষার মান উন্নয়নের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। আর এই শিক্ষাদান নির্ভর করে দেশের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের উপর। শিক্ষাদানের মান যত উন্নত এবং বাস্তবধর্মী হবে, জাতীয় শিক্ষার মান তত উন্নত হবে। শিক্ষার মান উন্নত ও বাস্তবধর্মী করার উদ্দেশ্যে শিক্ষার মহান দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত তাঁদের বিষয়ভিত্তিক এবং প্রয়োজনীয় সর্ব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান একান্ত প্রয়োজন। ১৯৯৫ সাল থেকে সেই কাজটি করে চলেছে খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই)।
২০০৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ অধ্যক্ষগণের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ২০ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্স, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক ও শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ক ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্স এবং কম্পিউটার শিক্ষকদের জন্য ২৭ দিন মেয়াদের প্রশিক্ষণ কোর্স প্রদান করে থাকে।
খুলনা শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরে খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট এর ১ কি.মি. পশ্চিমে তেলিগাতী কুয়েট রোডে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসে নয়নাভিরাম মনোরম পরিবেশে এ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি অবস্থিত। ইনস্টিটিউটে রয়েছে নিজস্ব তিনতলা সুরম্য একাডেমিক ভবন, শিক্ষকদের আবাসনের জন্য চারতলা হোস্টেল ভবন এবং দৃষ্টিনন্দন অতিথী ভবন। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ‘র আর্থিক সহায়তায় এবং ইউএনডিপি’র কারিগরি সহায়তায় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। একই সাথে দেশের ৫ টি বিভাগীয় অঞ্চলে এ জাতীয় ৫ টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়।
প্রতিষ্ঠার এক বছর পর ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। ইনস্টিটিউটে খুলনাঞ্চলের বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের শিক্ষার গুণগত মান, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নতমানের আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
শিক্ষার গুণগত মান এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সহযোগী অধ্যাপক সহকারী অধ্যাপক, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালকগণ প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।
উন্নতমানের আইসিটি প্রশিক্ষণের জন্য দেশের অন্যতম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র আইটি এক্সপার্ট শিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সরকারি কলেজের (অব.) অধ্যক্ষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার এর উপ-পরিচালক, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, একই বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিভিন্ন সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যাপক দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের ২০ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে ২ ব্যাচে মোট ৬০ জন অধ্যক্ষগণকে এ প্রশিক্ষণের সুযোগ পান।
৪০ দিনব্যাপী প্রতি ব্যাচে ৮০ জন করে শিক্ষক যেখানে ২টি বিষয়ে ৪০ জন করে ৮০ জন শিক্ষক প্রতি ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রতি বছরে এ জাতীয় ৫ টি ব্যাচে মোট ৪০০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কম্পিউটার ও আইসিটি কোর্সে ২৭ দিনব্যাপী প্রতি ব্যাচে ২০ জন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি বছর এ জাতীয় ৫ টি ব্যাচে মোট ১০০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
খুলনা এইচএসটিটিআই এর সহকারি পরিচালক মুহাম্মদ আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, আমরা প্রতি বছর বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে থাকি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং বরাদ্দ সাপেক্ষে যথাসময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এ সকল প্রশিক্ষণের সার্বিক তদারকি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে হয়ে থাকে।
এদিকে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ৯ জন কর্মকর্তা এবং ৩৫ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। শ্রেণীকক্ষ আসবাবপত্রের স্বল্পতা রয়েছে। ইনিস্টিটিউটে যেহেতু উন্নতমানের আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে সেই তুলনায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং আধুনিক নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে। ইনস্টিটিউট এর পানি নিস্কাসনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয় বলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়।
খুলনা গেজেট/ টি আই